19 May 2024, 02:42 pm

চলমান বিশ্ব মন্দায় ঋণসীমা কমিয়ে দিচ্ছে বিদেশি ব্যাংকগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি। রেমিট্যান্সেও মন্দাভাব। বিদেশি ঋণের মাধ্যমে যে ডলার আসত তাও কমেছে। মজুতে টান পড়েছে বেশ আগেই। এখন রীতিমতো ডলারের চরম সংকট। বাজার সামলাতে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির ফলে কমছে রিজার্ভ। নিয়মিত আমদানি দায় পরিশোধ না করায় বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণসীমা বা ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিয়েছে অনেক বিদেশি ব্যাংক। এতে বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক।

এ অবস্থায় বিদেশি ব্যাংকের ঋণসীমা বাড়াতে বিদেশ গিয়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে ধরনা দিচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের নেতারা। করছেন তদবির সুপারিশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর বড় অভিযোগ, এলসি দায় সময়মতো পরিশোধ না করায় বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট লাইন (ঋণসীমা) কমিয়ে দিয়েছে তারা।

বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হুসাইন। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তাদের আলাপ হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) পক্ষ থেকে কমপক্ষে পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুবাইতে গিয়ে বিদেশি আট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তাদেরকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝিয়েছেন। কী করা যেতে পারে সমাধান চেয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কিছু তদবির ছিল, কিছু সুপারিশ ছিল। আশা করা হচ্ছে, ধীরে ধীরে ঋণসীমা বাড়াবে  বিদেশি ব্যাংকগুলো। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে  বৈঠক করেছেন বলেও জানান তিনি।

বিদেশি ব্যাংকগুলো ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দেওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, বিদেশি ব্যাংকগুলো অভিযোগ করেছে, তাদেরকে এলসি পেমেন্ট দিতে বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক দেরি করছে। পেমেন্ট দিতে দেরি না করাই ভালো। কারণ, পেমেন্ট দিতে দেরি করলে বিদেশি যেসব ব্যাংক বাংলাদেশে ঋণ দিয়ে থাকে তাদের কাছে এটি খারাপ লক্ষণ। সময়মতো এলসির পেমেন্ট পরিশোধ করা বাঞ্চনীয় সবার জন্য। যে কোনো কারণে এলসি পেমেন্ট দিতে দেরি করলে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপরে নয়, পুরো ব্যাংক খাতের ওপরে এর খারাপ প্রভাব পড়ে। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বিদেশি ব্যাংকগুলো বার বার বলেছে, যেন পেমেন্ট দিতে দেরি না হয়।

প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জানান, ক্রেডিট লাইন কমানোর ফলে ডলারের সংস্থান না করে আমদানি এলসি খোলা যাচ্ছে না। এর প্রভাবে দেশের বাজারে ডলারসংকট কাটছে না। বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ কমিয়ে দেওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংক ও এবিবি তাদের সঙ্গে বৈঠক করার ফলে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন তারা।   বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ পরিস্থিতি নিয়ে অক্টোবরের শেষের দিকে ১০টি বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিদেশি মাশরেক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, কমার্স ব্যাংক এজি, জেপি মরগান, আইসিআইসিআই ব্যাংক, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সিঙ্গাপুর, ডাচ ব্যাংক, এইচএসবিসি, সিটিব্যাংক এনএ এবং দোহা ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি ঋণ ছিল মাশরেক ব্যাংকে। গত জুলাইয়ে ব্যাংকটিতে ঋণ ছিল ৩৪ কোটি ডলার। আগস্টে তা কমিয়ে ২৫ কোটি ডলারে নামানো হয়। সেপ্টেম্বরে আরো কমিয়ে নামানো হয় ৮ কোটি ডলারে। আইসিআইসিআই ব্যাংকে জুলাইয়ে ছিল ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। আগস্টে কমে ৩ কোটি ৭৯ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারে নামে। ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সিঙ্গাপুরের জুলাইয়ে ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে আগস্টে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়। তবে সেপ্টেম্বরে তা ১০ কোটি ডলারে নেমেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের জুলাইয়ে ছিল ১৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে তা ১৪ কোটি ৩২ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ১৪ কোটি ১৭ লাখ ডলারে নেমেছে। সিটিব্যাংক এনএতে জুলাইয়ের ৫৬ লাখ ডলার থেকে বেড়ে আগস্টে ১ কোটি ৮৮ লাখ ডলার হয়। তবে সেপ্টেম্বরে আবার ৬০ লাখ ডলারে নেমেছে।

ব্যাংকাররা জানান, বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে পরিশোধের ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী ঋণসীমা কমিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছুটা দ্রুত ঘটেছে। এর প্রধান কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যাংক যথাসময়ে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। আবার ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। আবার রিজার্ভের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করছে, আইএমএফের হিসেবে সে তুলনায় অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার কম। অন্যদিকে, ডলারে বেশি মুনাফা করায় তিন দফায় ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের পর বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে একটা খারাপ বার্তা গেছে। ফলে তারা বাংলাদেশে ঋণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে চাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকের আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো বিদেশি ব্যাংক থেকে এ ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে। সাধারণভাবে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে এসব ঋণ নেওয়া হয়। গ্রাহকের পক্ষে দেশি ব্যাংক ডলার সংস্থান করে দায় পরিশোধ করে। এ জন্য বিদেশি ব্যাংক নির্ধারিত হারে সুদ পায়। একটি ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য, আর্থিক বিবরণীসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে একেক ব্যাংকের একেক ঋণসীমা দেওয়া হয়। ডলার সংকটের এ সময়ে ঋণসীমা না বাড়িয়ে কমানোয় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  ও সিইও সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, আমাদের প্রক্রিয়াগত ভাবে অনেক ব্যাংকের দুর্বলতা আছে। তারা সময়মতো ফরেন একচেঞ্জ ট্রানজেকশন করতে পারে না। অনেক ব্যাংকের ফরেন ট্রেড, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং ডিভিশন এগুলো আলাদা আলাদা থাকে। যে কারণে এ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক। সেদিকে ব্যাংকগুলোকে খেয়াল রাখা দরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5036
  • Total Visits: 749055
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1127

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ ইং
  • ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১০ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:৪২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018